মানুষের জ্ঞান বিকাশে প্রধান রুচিসম্মত মশলা হচ্ছে শিক্ষা। শিশু, শৈশব, শিক্ষা এগুলো উন্নত জাতি গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ! কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের কাছে সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে শিশু শিক্ষা। বাস্তবে ‘শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার’, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’— এগুলো জুম পাহাড়ে শুধুই মুখের বুলি।বর্তমান শিক্ষা সুদূর প্রচারে যুক্ত "শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড" এটা শৈশব থেকে জেনে এসেছি। শিক্ষা একমাত্র জ্ঞান বিকাশের পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে মানুষের চিন্তা শক্তিকে। ছোট ছোট নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের কতটুকুই বা ভালোবাসার অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্হা!পাহাড়ের প্রান্তিক পথে গমন করলে দু-চোখে অশ্রু বর্ষিত হয়, বুনোফুলগুলো অঝোরে ঝড়ে পড়া দৃশ্য গুলো নীরবে মেনে নেওয়া ছাড়া কি আছে । সেখানে অনুন্নত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠা কোমলমতি শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত!
নেই তাদের জ্ঞান আহরণের নির্দিষ্ট বিদ্যাপিঠ, তেমনি নেই সচেতনতার অভিভাবক,জনপ্রতিনিধি সচেতনতার মহল কিংবা রাষ্ট্রের নজড়। কিছু কিছু অঞ্চল ঘুরে দেখলে বুঝা যায় স্কুল আছে নামেই মাত্রই, নেই সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রুচিসম্মত পাঠ দানের কক্ষ ,নেই সুযোগ্য শিক্ষক। দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে নজড় পড়লে বাস্তব চিত্র গুলো দেখতে পাই। কোথায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? পাহাড়ের পাশাপাশি দুর্গম এলাকার দিকে ছুটে চললে নেই সেখানেও কোন স্কুল প্রতিষ্ঠান,নেই শিশুদের বিকাশ মান স্তর। কোথাও বা দেখা মেলে বেড়া ভাঙা,গরু-ছাগলের মল ভর্তি,তালা ঝুলন্ত দরজা স্কুল। কয়েকটা পাড়ায় খোঁজ নিলে জানা যায় সেখানকার দায়িত্বরত স্কুলের শিক্ষকরা বরগা দিয়ে যায়, ঘরে বসে বেতন তুলে খায় এরূপ বাস্তব চিত্র গুলো পাহাড়ে দেখা মেলে। আজ এই ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন শিক্ষকদের কারণে কত নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের স্বপ্ন অজড়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। জ্ঞানবিজ্ঞানে আগ্রহী এই কোমলমতি শিশুরা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করবে কিভাব? অধিকাংশ শিশু আছে যাদের শৈশব কাটে জুম ঘরে, জুম পাহাড়ে, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। যে সময়ে তাদের বই হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই সময়ে তারা শত-শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দুমুঠো অন্নের জন্য হেঁটে যায়, নিজ ভূমে উৎপাদিত জুমের শাক-সবজি বিক্রি করতে । প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঠিক ব্যবস্থা নেই বলে ওরা আজ জ্ঞান আহরণ থেকে বঞ্চিত! যার ফলে তাদেরকে বাল্য শিক্ষার বদলে জুম শিক্ষাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়।
একটি সমাজ থেকে বেড়িয়ে এসে অবিভক্তের কার্ষপ্রণাদি সাহিত্য রচনা করছে প্রগতিশীল, চিন্তাশীল বিচক্ষণতা নিরন্তর পথচলা ইতিহাসের লিপিবদ্ধে সংযুক্ত এক ঝাঁক তারুণ্যের সমবেত শক্তি। একদিন অবশ্যই এই জুম পাহাড়ে ফিরে আসবে একদল বুনোফুল, স্বপ্ন হবে আকাশচুম্বী, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাবে পাহাড়ের বুকে, প্রান্তরে প্রান্তরে। এই পাহাড়ের মেঠো পথ ধরে চলমান সভ্যতার সাথে মিশে পাহাড়ের বুকে ঠাঁই নিক প্রান্তিক মানুষের স্বপ্ন গুলো ।
ভূমি জুড়ে বসতিস্থল বানিয়ে ঐতিহ্যে সংস্কৃতি নিয়ে জাতি বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। এই জুম পাহাড়ের উর্বর সবুজ মাটিকে আঁকলে রেখেছে ভূমিপুত্ররা, কঠিন সময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে জুম পাহাড়ের মানুষ এখনো প্রান্তিক অঞ্চলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঐতিহাসিক আঙ্গিকে দেখলে বুঝা যায় পৃথিবীর ইতিহাস চিরকাল ধনী দরিদ্র, মালিক শ্রমিক, শোষক শোষিতে বিভক্ত!পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় পাহাড়ের মানুষ এখনো অনেকটা পিছিয়ে। চলমান নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত নেওয়া তারুণ্যের ভূমিকা কতখানি মজবুত হবে তা আমার অজানা। বস্তু স্থায়িত্ব নয়, তেমনি পরিবর্তনশীল। দোদুল্যমনা,লেজুড়বৃত্তি সাময়িক রূপভেদ থেকে বেড়িয়ে এসে পূর্ণ সাহিত্য রচনা করতে আগ্রহী হতে হবে। চেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা তরুণ প্রজন্মের ভূমিকাটা বেশি গুরুত্ব ও সময়ের দাবি রাঁখে! প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার মান থেকেই অনুপ্রেরণার যোগান হোক।
"জীবন যাক এগিয়ে স্বপ্ন বাচুক পাহাড়ে"
No comments:
Post a Comment