এই সুন্দর গ্রামগুলো একদিন বিলীন হয়ে যাবে রাষ্ট্রের উন্নয়নের জোয়ারে!

 



পাহাড়ের জনপদের স্বস্তির নিঃশ্বাসের ঠিকানা, শান্তির খোজে জীবনের বাঁধা নিয়মের রুটিনে চলে জীবন । শতাব্দীর কাল ধরে জীবন আঁকলে রাখা প্রান্তিক মানুষের জীবনধারা গুলো বরই দুর্বেদ্য, তবুও তারা প্রভাতের লাল সূর্যের আলো নিয়ে কর্মত্বটাকে ভাগ্য হিসেবে পরিচয় বহন করে। দিন শেষে ফেরে ক্লান্ত রৌদ্রস্নাতে পুড়ে চামড়া দেহ নিয়ে নিজ বাসগৃহে। অঢেল পাহাড়ে অসংখ্য ছোট বড় নদী, সবুজের ঘেরা ছাতার মতো সবুজবীথি, ভোরের ঘুম ভাঙে বনো মুরগের ডাকে। দৃষ্টিগোচর সীমান্তে বৃক্ষ ছায়া ঘেড়া ছোট্ট ছোট্ট গৃহ সাজিয়ে তুলেছে এক অনন্য নগরীর চিহ্ন। এই নির্জন পাহাড়ে চোখ ফাঁকি দিয়ে যায় প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্য বিস্তার করতে করতে সে শঙ্কাহীনভাবে সমান তালে সামনে এগিয়ে চলা মানুষের দিকে জীবন পড়ে থাকে। দেহের পেশিশক্তিতে পাহাড়ে উঠে রোদ্দুরে চামড়া পুড়ে দেহ থেকে নিঃসৃত ঘামের বিন্দু গুলো রোপন করতে থাকে মাতৃভূমিতে। কটিন জীবনসংগ্রাম পেটের ক্ষুধার্ত মেঠাতে হাড় ভাঙা পরিশ্রমটাই জীবনের ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছে প্রান্তিক মানুষেরা। সূর্য্য উদয়কাল থেকে সূর্যাস্তকাল অবধি পর্যন্ত জুমের ঘরে দিন কাঁটে। সুশীতল বাতাস মনোরম দৃষ্টিপাত পাখিদের কলরোহ বিনোদনের সুর আজও জীবনের মায়াকে তাড়া দিয়ে বেড়ায়।

জীবনের তাগিদে জীবন সংকট রেঁখে জীবন যুদ্ধে নেমেছে রৌদ্রস্নাত প্রকৃতির ভূমি পুত্ররা। ধরে রেঁখেছে অবাধ সৌন্দর্য পাহাড় মালাকে,সেখানে গড়ে তুলেছে শান্তি বাসযোগ্য বেঁচে থাকার জীবন। একটি সমৃদ্ধি উচ্চাভিলাস অতি-আবেগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সংকট ময় জীবনটিও টিকিয়ে রাঁখা অত্যন্ত বিপদগামী পথে অতিবাহিত করছে। মাটির সাথে মিশে আছে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যেবাহী সংস্কৃতি জীবনধারা। তাদের মূল অর্থনৈতিক অবকাঠামোর এক মাত্র সম্বল জুম চাষাবাদের উপড় প্রবল শক্তি প্রয়োগ করে পেটের ক্ষুধা মেটানো। দুমুঠো অন্ন যোগাতে হাড় ভাঙার পরিশ্রমটা শ্রেয় ।

এই নিঃশব্দ শহরে প্রতিমুহুর্তে ডলক দিয়ে যায় দৃশ্যমান পর্যটন শিল্পের নামে ভূমি বেদখল করে উচ্ছেদের উন্নয়ন! উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ইতিহাস স্বাক্ষী। রাতের অন্ধকার নেমে আসলে দুরে কয়েক ধরনের আলো দেখা যায়।
সেখানে কয়েক বছর আগে সন্ধ্যার সময় হারিকেনের আলো জ্বলতো। সংস্কৃতির নানা উৎসবে মেতে উঠতো আনন্দের প্রতিধ্বনি হতো পাহাড়ে পাহাড়েই। কত সুখ-দুঃখে  জীবনযাপনের গল্প ছিল তাদের। জুম চাষাবাদের মধ্যে দিয়ে দু'বেলা খাবার জুটতো। তবুও শত কষ্টের মাঝেও মুখের সুন্দর হাঁসিটা চেঁপে ধঁরে রাঁখতে পারতো না। যেমন সুন্দর হাঁসি, তেমনি কান্নার নোনাজলে জলপ্রাত হৃদয় ভাঙার অর্থ।

অন্ধকারে ছোট ছোট বিন্দুতে জ্বলে দেখতে জোনাকি পোকার আলোর মতই। কি সেটা?  প্রতিদিন কেন সন্ধ্যার কালো পাহাড়ে জ্বলে? সেখানে কি আছে? পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের নামে জবরদখল এবং বাহারি নামের সাথে সংস্কৃতি আগ্রাসনে চিত্র।
১। কাপ্রু ম্রো পাড়া (নীলগিরি)- ৬০ একর, উচ্ছেদ- ২০০ ম্রো ও মারমা পরিবার।
২। সে প্রু পাড়া (জীবননগর)- ৬০০ একর, উচ্ছেদ -১২৯ ম্রো পরিবার।
৩। চন্দ্রপাহাড়, বান্দরবন- ৫০০ একর,
৪। রুইলুই পাড়া, (সাজেক)- ৫ একর, উচ্ছেদ -৬৫ ত্রিপুরা পরিবার। (সম্প্রতি আরো ১০০ লুসাই আদিবাসী পরিবার নিরবে ভারতে চলে গেছে খবরে আসছিল)
৫। ক্রাউডং (ডিমপাহাড়) - ৫০০ একর, উচ্ছেদ -২০২ ম্রো পরিবার।
৬। নীলাচল (টাইগার পাড়া) -২০ একর, উচ্ছেদ -১০০ ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা পরিবার।
ভ্রমণপিয়াসী মানুষের জন্য এসব করুণ গল্প তামাশা হতে পারে, পাহাড়ের পর্যটন মানে আদিবাসী উচ্ছেদ, ভূমি বেদখলের অভিযোগ এবং ঘর হারানোর ভয়।

পাহাড়ের বাস্তবচিত্র গুলো নীরবে কাঁদে রাষ্ট্রের গ্রাস্যমান উন্নয়নে।

No comments:

P

Powered by Blogger.